শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
Logo রাজশাহীতে আবারও ভবন ধ্বসের বীজ বপন Logo সিন্ডিকেটের বেড়া জালে পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিস Logo রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায়ী”র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যবসায়ীক ও যুবলীগ নেতা Logo বিডিক্লিন রাজশাহীর উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ Logo সাংবাদিক মীর তোফায়েলের উপর হামলা, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের নিন্দা Logo ১৩তম ডেপুটি জেলার এবং ৬১তম কারারক্ষি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo কেশরহাটে অনুমোদনহীন সমিতির উচ্চ সুদে সর্বশান্ত অনেক পরিবার Logo রাজশাহীর লক্ষীপুরে ওয়ানওয়ে খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন Logo তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান

এক টাকা ফি–তে চিকিৎসা দিচ্ছেন রাজশাহীর সুমাইয়া

রিপোর্টার: / ২৩৩ বার পড়া হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী শহরের সাহেব বাজারে এই ওষুধের দোকানে বসে মাত্র এক টাকা সম্মানী নিয়ে রোগী দেখছেন চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক টাকায় রোগী দেখার উদ্যোগটাকে নিয়ে আমরা ধীরেসুস্থেই এগোতে চেয়েছিলাম। তবে ফেসবুকে পোস্ট দিলে এভাবে সাড়া পড়বে, তা বুঝতে পারিনি। তাই পরে তড়িঘড়ি করেই শুরু করে দিতে হলো। আমার বাবা চান, তাঁর তিন চিকিৎসক মেয়ে জনসেবা করুক। আমাকে দিয়েই তার শুরুটা হলো। আমিও চাই উদ্যোগটা টিকে থাকুক।’

২০২০ সালে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। তিনি চলতি মাসের শুরু থেকে রাজশাহীর সাহেব বাজারে তাঁর বাবার ওষুধের দোকানে বসে এক টাকায় রোগী দেখা শুরু করেছেন। দিনে গড়ে ২০ জনের বেশি রোগী দেখছেন। প্রাথমিকভাবে দেখে রোগীকে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। আর জটিল সমস্যা থাকলে ওই রোগীদের কোথায়, কার কাছে যেতে হবে তা বলে দিচ্ছেন।

চিকিৎসক সুমাইয়ার রোগী দেখা নিয়ে এই পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করা হলে তা ছড়িয়ে পড়ে

চিকিৎসক সুমাইয়ার রোগী দেখা নিয়ে এই পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করা হলে তা ছড়িয়ে পড়ে
ছবি: সংগৃহীত

সুমাইয়া বললেন, তাঁর বাবা একদম বিনা মূল্যে রোগী দেখতে বলেছিলেন। তবে সুমাইয়া চেয়েছিলেন রোগীদের কাছ থেকে কম করে হলেও ১০ টাকা নেওয়া যেতে পারে। তবে পরে বাবার ইচ্ছায় তা এক টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনা মূল্যে রোগী না দেখার কারণ হিসেবে সুমাইয়া জানালেন, তাঁর উদ্যোগে কয়েকজন মিলে করোনার সময় থেকে ‘দ্য ফাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করছেন। সংগঠনের উদ্যোক্তা সদস্যদের নিজেদের আর্থিক সহায়তায় মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছে এ সংগঠন। রোগী দেখে যা পাওয়া যাবে, তাই দিয়ে এ সংগঠনের কাজে সহায়তা করা হবে।

এক টাকায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সুমাইয়া বললেন, সেবা নিতে আসা মানুষজন খুব খুশি। লিফলেটে যে মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তাতে শুভকামনা জানানোর পাশাপাশি অনেকে খোশগল্প করার জন্যও ফোন দেন। তাই বাধ্য হয়ে বাবা ফোন ধরে সবার সঙ্গে কথা বলছেন।

এক টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসক সুমাইয়ার কাছে সেবা নিতে এসেছেন রোগীরা

এক টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসক সুমাইয়ার কাছে সেবা নিতে এসেছেন রোগীরা
ছবি: শহীদুল ইসলাম

মাত্র এক টাকায় চিকিৎসক দেখাতে পারায় রোগীরাও খুশি। খুশির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একজন চকলেট উপহার দিয়েছেন। একজন গোলাপ ফুল দিয়েছেন। ভালোবেসে রোগীদের দেওয়া উপহার এবং রোগী দেখার পর তাঁদের আবদারে সেলফি বা যে ছবি তুলেছেন, তা–ও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সুমাইয়া।

জীবন কুমার সরকার স্ত্রী শাপলা সরকারের প্রস্রাবের চাপজনিত সমস্যা ছিল। এই দম্পতির সাড়ে চার বছর বয়সী সন্তানের ঠান্ডাজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল। জীবন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসা থেকে চিকিৎসক সুমাইয়ার কাছে আসা–যাওয়ায় রিকশাভাড়া লেগেছে ৩০ টাকা। আর স্ত্রী আর সন্তানকে চিকিৎসক দেখাতে লেগেছে এক টাকা করে মোট দুই টাকা। বললেন, অন্য জায়গায় চিকিৎসক দেখাতে হলে কম করে হলেও ৫০০ টাকার বেশি টাকা দিতে হতো।

ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমানও জানালেন, তিনি চিকিৎসক সুমাইয়ার কাছে ঠান্ডাজনিত সমস্যার জন্য গিয়েছিলেন। সব দেখে সুমাইয়া ওষুধ লিখে দেন। হাসিবুর রহমানের মতে, সুমাইয়ার এ উদ্যোগে একদম দরিদ্র মানুষও অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সাহস পাবেন।

উদ্যোগটি টিকবে কত দিন

সুমাইয়ার উদ্যোগটি অনেকের নজর কেড়েছে। রাজশাহীর স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে প্রথম আলো কথা বলেছে। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে প্রচারের যুগে অনেকেই নিজের প্রচার বাড়ানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে। চিকিৎসক সুমাইয়াও তা করেছেন কি না কে জানে। উদ্যোগটি কত দিন টেকে, তা–ই এখন দেখার বিষয়।

মুঠোফোনে কথা হলো সুমাইয়ার বাবা মীর মোজাম্মেল আলীর সঙ্গে। তিনি রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। তিনি জানান, মেয়ে ফেসবুকে লিফলেটের ছবি পোস্ট করার পর থেকে দেশ–বিদেশ থেকে অসংখ্য ফোন পাচ্ছেন। মেয়ে সংসার, পেশাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে বলে ফোন ধরছেন তিনি নিজেই। হাসতে হাসতে বললেন, ফোন করে অনেকেই মেয়েকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। পাশাপাশি এই উদ্যোগ লোক দেখানোর জন্য কি না বা টিকবে কত দিন, সে প্রশ্নও করছেন। অনেকে চিকিৎসকদের এক টাকায় নামিয়ে আনার অভিযোগ তুলে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।

টাকা না দিলেও কোনো সমস্যা নেই, সে কথা রোগীদের এভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল

টাকা না দিলেও কোনো সমস্যা নেই, সে কথা রোগীদের এভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল
ছবি: সংগৃহীত

মীর মোজাম্মেল আলী বললেন, তিনি বা তাঁর স্ত্রী সেলিনা সুলতানা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারেননি। স্ত্রী পারিবারিক মিষ্টির ব্যবসার হাল ধরেছেন। সব সময় চাইতেন ছেলেমেয়েদের চিকিৎসক বানাবেন। ছেলেমেয়েরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করবেন। তিন মেয়েই চিকিৎসক হয়েছেন। ছেলে মীর সালাউদ্দিন ইউসুফ এ পেশায় আসতে চাননি বলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন পারিবারিক ব্যবসা দেখছেন।

সুমাইয়া এই দম্পতির ছোট মেয়ে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। বর্তমানে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুমাইয়ার স্বামী এম এম আবদুর রহমান বিশ্বাসও চিকিৎসক। এই দম্পতির পাঁচ ও দুই বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।

বাবার ওষুধের দোকানে বসে এক টাকায় রোগী দেখছেন সুমাইয়া

বাবার ওষুধের দোকানে বসে এক টাকায় রোগী দেখছেন সুমাইয়া
ছবি: প্রথম আলো

মীর মোজাম্মেল আলী জানালেন, বড় দুই মেয়ে চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন কারণে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ছোট মেয়ে ২০২০ সালে চিকিৎসক হলে কিছু একটা করার চিন্তাটা আবার মাথায় আসে। বাসার নিচে একটি ঘরে মোবাইল বিক্রির জন্য দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। যিনি ভাড়া নিয়েছিলেন, তিনি কয়েক মাসের ভাড়া দিতে পারেননি। পরে এক মাসের ভাড়া দিয়ে ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে যান। পরে গত মাস থেকে এ ঘরে মেয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। বিক্রির জন্য কিছু ওষুধও রাখা হয়েছে। এরপর ফেসবুকে মেয়ের পোস্ট ভাইরাল হলে এখন ভিন্নভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।

মীর মোজাম্মেল আলী বললেন, মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য মন লাগে। এটাও মনে রাখতে হবে, জনসেবা করলে মানুষের দোয়া পাওয়া গেলেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মেয়ে সুমাইয়া বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলেও এ উদ্যোগটি চালিয়ে যেতে চেয়েছেন। অন্য দুই মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা বলে আপাতত কিছু করতে পারছেন না। তবে এক টাকায় চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগে শামিল হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে বাইরের চারজন পুরুষ চিকিৎসক নিজেরাই জানিয়েছেন, তাঁরাও এক টাকায় রোগীদের সেবা দিতে চান। তাই মনে হচ্ছে, উদ্যোগটি চলমান রাখা সম্ভব হবে।

সূত্র: প্রথমআলো


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
Design & Developed by : Ecare Solutions