সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
Logo রাজশাহীতে আবারও ভবন ধ্বসের বীজ বপন Logo সিন্ডিকেটের বেড়া জালে পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিস Logo রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায়ী”র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যবসায়ীক ও যুবলীগ নেতা Logo বিডিক্লিন রাজশাহীর উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ Logo সাংবাদিক মীর তোফায়েলের উপর হামলা, রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের নিন্দা Logo ১৩তম ডেপুটি জেলার এবং ৬১তম কারারক্ষি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo কেশরহাটে অনুমোদনহীন সমিতির উচ্চ সুদে সর্বশান্ত অনেক পরিবার Logo রাজশাহীর লক্ষীপুরে ওয়ানওয়ে খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন Logo তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান

‘ডেলিভারি বয়’ থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার

রিপোর্টার: / ২৩০ বার পড়া হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই জীবিকার সন্ধানে নামতে হয় আলমগীরকে। এখন হয়েছে নিজের প্রতিষ্ঠান। দেশে থেকেই কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানেও।

অফিসেরই একটা ঘরে আলমগীরের থাকার ব্যবস্থা। সেখানে ছিল কম্পিউটার। এখান থেকেই আলমগীরের জীবনে শুরু হয় নতুন বাঁক। কারণ, আলমগীরের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সারা দিন কাজ করতেন পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে। আর রাতে কম্পিউটার নাড়াচাড়া করতেন। পাশের এক অফিসে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ দেখতেন আলমগীর। কি বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকতেন, আবার কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকাতেন। কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, সেটা মাথায় গেঁথে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। আর রাতে এসে কম্পিউটারে অনুশীলন করতেন। এভাবেই কম্পিউটার শেখা শুরু আলমগীরের।

চমকে দিলেন কাজ করে

বারকোডের নকশা তৈরির একটা কাজ চলছিল অফিসে। অফিসের কর্তাই সেটা করছিলেন। হঠাৎ গিয়ে আলমগীর তাঁকে বললেন, ‘বস আমি করি?’ কর্তা প্রথমে রাজি হলেন না। কিন্তু আলমগীর নাছোড়বান্দা। আলমগীর কম্পিউটারে কাজটি করে দিলেন। আলমগীর প্রথম আলোকে বললেন, ‘সেই যে কম্পিউটারে বসলাম, আর ছাড়িনি। কাজ করে গেছি গ্রাফিক ডিজাইনের। বেতন ও সম্মান দুটিই বেড়েছিল ওই অফিসে।’  সেটা ২০০৮ সালের কথা।

আবার পড়াশোনা

আলমগীর ইসলামের পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছা। কিন্তু একা কী করবেন? চাকরি থেকে মোটামুটি ভালোই আয় হচ্ছিল। ২০১০ সালে আলমগীর ভর্তি হলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রামে। বাণিজ্য বিভাগে সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে যান আলমগীর। তিনি বলেন,  ‘একসময় খুব কাঁদতাম। আর নিজেকেই বুঝ দিতাম পড়ালেখা সবার কপালে জোটে না।’  অবশেষে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। এ সময়েই ওয়েবসাইটে কানাডাভিত্তিক একটি তেল কোম্পানির চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পান। আবেদন করেন কম্পিউটার কন্ট্রোল রুম অপারেটর পদে। ভিসা ফরমও চলে আসে। কিন্তু আলমগীর তো দেশে থেকে কিছু করতে চান, তাই কানাডায় আর গেলেন না।

স্বপ্ন হলো বড়

আলমগীর কাজ জানতেন; কিন্তু কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ছিল না। ২০১৫ সালে তাঁর বন্ধু আতিকুর রহমান প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকার ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটে গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হলেন আলমগীর। চাকরির পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস করতেন। কোর্স করতে করতেই তিনি জানতে পারলেন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে। ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো আয় হয়, সেটিও প্রথম শুনলেন। জানলেন, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, আপওয়ার্ক ও ফাইভআরের মতো মার্কেটপ্লেসের (অনলাইন কাজের বাজার) কথা। কীভাবে কী করতে হবে, তা বুঝে নিলেন প্রশিক্ষকের কাছ থেকে। আলমগীর ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রথম কাজ করেন ২০১৫ সালে। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে লোগো তৈরির প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় তাঁর নকশা। আয় করেন ১৫০ মার্কিন ডলার।

ডিসকভার আইটি ইনস্টিটিউট

আলমগীর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলেন তাঁর মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা কিছু করতে চান। কিন্তু পারছেন না। ২০১৬ সালে আলমগীর তাঁদের জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিসকভার আইটি ইনস্টিটিউট। ঢাকার ফকিরেরপুল এলাকায় যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তাই সেখানে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ছোট পরিসরে প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুললেন। ভালোই সাড়া পেলেন। অনেকে আগ্রহী হলেন। ফ্রিল্যান্সিং শেখার একটি ব্যাচও তৈরি হলো। আলমগীর ধীরে ধীরে তৈরি করলেন দক্ষ কর্মী। কাউকে কাউকে নিয়োগ দিলেন নিজের প্রতিষ্ঠানে।

আবার ফেরা সিঙ্গাইরে

২০১৯ সালে আলমগীর ইসলাম মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ফিরে এলেন। যখন গ্রামে ফিরে এলেন, তখন তাঁর ঢাকার প্রতিষ্ঠানে ১০ জন কর্মী কাজ করেন। আলমগীরের মাসিক আয় তখন প্রায় চার লাখ টাকা। চারজন কর্মীকে সিঙ্গাইরে নিয়ে যান। বাকি ছয়জন ঢাকায় ফ্রিল্যান্সিং করেন। তিনি বলেন, ‘দেখলাম, শহরে শেখার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু গ্রামে নেই। গ্রামের তরুণদের অনেকেরই ইচ্ছা ফ্রিল্যান্সিং বা ভালো কোনো কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তাই গ্রামে এসে কাজ শুরু করলাম।’

সিঙ্গাইর পৌরসভা কার্যালয়ের পাশে দুই হাজার বর্গফুটের অফিস ভাড়া নিলেন আলমগীর। সেখানে নতুন করে গোছাতে লাগলেন ডিসকভার আইটি ইনস্টিটিউট।

বর্তমানে আলমগীরের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থী ১০০ জন। গত চার বছরে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৫টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন ১ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে ২০০ জনকে বিনা মূল্যেই শিখেয়েছেন।

২০১৩ সালে নানা-নানির কথামতো আলমগীর ইসলাম বিয়ে করেন। তখনো তিনি চাকরি করেন। আলমগীর এখন তিন মেয়ের বাবা। ২০১৯ সালে নিজ গ্রামে নানাবাড়িতে নতুন বাড়িও করেছেন। একই বছর তাঁর নানার যকৃৎ ক্যানসার ধরা পড়ে। আলমগীর নানার চিকিৎসা করান। আড়াই বছর টানা চিকিৎসার পর গত বছর নানা মারা যান।

সিঙ্গাইরে ফিরে গেলেও অনলাইন কাজের বাজার ফাইভআর ও আপওয়ার্কে কাজ করেন এখনো। এই দুই ওয়েবসাইটের শীর্ষস্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদেরও (টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার) একজন তিনি। মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানেও চাকরি শুরু করেন বাংলাদেশ থেকে। মাসিক বেতন ছিল প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন ডলার। এ চাকরির চুক্তি শেষ হওয়ার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মাসিক বেতন দুই হাজার ডলার। সিঙ্গাইরে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক আয় হচ্ছে লাখ টাকার ওপরে।

আলমগীর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা, প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বড় করা। এখন সিঙ্গাইরে চারজন কর্মী আছেন। একসময় শতজন কর্মী আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন, এটা আমার স্বপ্ন। এত দিন ঢাকায় থাকলে আমার স্বপ্নটা হয়তো পূরণ হতো। কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা নিজ গ্রাম ঘিরে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের দক্ষ করে তুলতে চাই। সেটি সম্ভব হলে মনে করব, আমি সফল হয়েছি।’

সূত্র: প্রথম আলো


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
Design & Developed by : Ecare Solutions